ছোট শিশুর খাবার রুটিন

ছোট শিশুর খাবার রুটিন
শিশুরা খেতে না চাইলে নানা বাহানায় খাওয়ানো হয়। সমস্যাটা বেশি হয় অবুঝ শিশুদের নিয়ে। পেটপুরে গেলে বা কোনো খাবার খেতে অরুচি হলে সেটা তারা বোঝাতে পারে না।এ জন্য মায়েদের সতর্ক হয়ে সন্তানদের খাবার খাওয়ানো উচিত। বিশেষত শিশুর বয়স বুঝে পরিমাণমতো খাবার খাওয়ানো জরুরি। নবজাতকের খাবার নবজাতক জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যেই মায়ের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। নবজাতকের বয়স ছয় মাস হওয়া পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। এ সময় ঘন ঘন শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। একবারে একটি স্তন থেকে বেশি সময় নিয়ে খাওয়াতে হবে। পরেরবার অন্য স্তন থেকে একই নিয়মে শিশুকে দুধ খাওয়াতে হবে। এই বয়সী শিশুকে পানি, চিনির পানি, জুস বা ফলের শরবত, কৌটাজাত গুঁড়া দুধ, মধু বা অন্য কোনো খাবার দেওয়া যাবে না। শিশু দুধ কম পাচ্ছে ভেবে উদ্বিগ্ন হওয়া যাবে না। নবজাতক দিনে ছয়বার প্রস্রাব করলে, ভালোমতো ঘুমালে, হাসিখুশি থাকলে, হাত-পা নাড়ালে এবং ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকলে বুঝতে হবে শিশু যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে। সপ্তম ও অষ্টম মাস ছয় মাস পেরিয়ে গেলে শিশুকে প্রথমে মায়ের দুধের পাশাপাশি পারিবারিক খাবার চটকিয়ে শিশুর উপযোগী করে খাওয়ানো শুরু করতে হবে। দিনে দুবার ২৫০ মিলিলিটারের বাটির অর্ধেক বাটি নরম বা শক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। নরম খিচুড়ি, ভাত, শাক-সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা শিশুর উপযোগী করে খাওয়াতে হবে। এই খাবারের পাশাপাশি শিশুকে দিনে দুবার সমপরিমাণ পুষ্টিকর নাশতা খেতে দিতে হবে। শিশুর সাত মাসের শুরু থেকে আট মাস পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত চলবে এই রুটিন। খাবার তৈরি ও খাওয়ানোর আগে মা ও শিশুর হাত সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। নবম থেকে একাদশ মাস অষ্টম মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকেই শিশুকে পারিবারিক খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। অর্থাত্ ২৫০ মিলিলিটারের বাটির অর্ধেক বাটি নরম বা শক্ত খাবার দুবেলার পরিবর্তে তিনবেলা করে খাওয়াতে হবে। এই সময় থেকে শিশুকে নিজে নিজে খেতে শেখাতে হবে। একই সঙ্গে মায়ের দুধও খাওয়াতে হবে। এর পাশাপাশি সমপরিমাণ বাটির পুষ্টিকর নাশতা খেতে দিতে হবে দিনে দুবার। সব মিলিয়ে দিনে পাঁচবার খাবার খাওয়াতে হবে এই বয়সী শিশুকে। দ্বাদশ থেকে ২৩ মাস শিশুর বয়স বারোতম মাসে পড়লে তাকে পারিবারিক খাবার দেওয়া শুরু করো যেতে পারে। শিশুকে নিজে নিজে খেতে উত্সাহিত করতে পারলে ভালো। দিনে তিনবার পুষ্টিকর খাবার দরকার তার এ সময়ে। তবে খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। অর্থাত্ এই বয়সে দিনে তিনবার ২৫০ মিলিলিটার বাটির এক বাটি স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে। এর পাশাপাশি মায়ের দুধও খাওয়াতে হবে। সঙ্গে দুবেলা সমপরিমাণ বাটির পুষ্টিকর নাশতা খেতে দিন। ২৪ মাস থেকে ৫৯ মাস শিশুকে এখন নিজে নিজে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসিয়ে খাবার খেতে উত্সাহিত করতে হবে। এই বয়সী শিশুকে সকালে একটি রুটি, একটি ডিম অথবা এক বাটি সবজি খেতে দিতে হবে। সকাল ও দুপুরের মাঝের নাশতা হিসেবে যেকোনো মৌসুমি ফল বা বাড়িতে তৈরি তেলে ভাজা খাবার খাওয়াতে হবে। দুপুরে এক বাটি ভাত, এক বাটি শাক-সবজি, দুই টেবিল চামচ ঘন ডাল ও এক টুকরা মাছ, মাংস, ডিম বা কলিজা দিন। বিকেলের নাশতায় পায়েস, দই অথবা মৌসুমি ফল বা বাড়িতে তৈরি তেলে ভাজা খাবার দিতে পারেন। রাতে এক বাটি ভাত, এক বাটি সবজি, দুই টেবিল চামচ ঘন ডাল আর যদি সম্ভব হয় এক টুকরা মাছ, মাংস, ডিম বা কলিজা খেতে দিতে পারেন। খাবার সময় আয়োডিনযুক্ত লবণ, পায়েস ও মিষ্টিজাতীয় খাবার পাতে রাখতে হবে। ঘরে তৈরি পারিবারিক খাবারই শিশুর পুষ্টি, মেধাবিকাশ ও সঠিক শারীরিক বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট। মনে রাখতে হবে শিশুকে কোনো রকম বাইরের বা প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ানো যাবে না। চিপস, চকোলেট, আইসক্রিম বা কোনো রকম জাংক ফুড খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।